বর্তমানে (এপ্রিল ২০২৫) বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতীয় ভিসা (Indian Visa) প্রদান আংশিকভাবে চালু রয়েছে, তবে তা সীমিত পরিসরে। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। এরপর ভারতীয় দূতাবাসের কিছু কর্মীকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয়, এবং ভিসা কার্যক্রম সীমিত করা হয়। এই পরিস্থিতিতে চীন বাংলাদেশে চিকিৎসা ও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে, যা ভারতের প্রভাব কমিয়ে দিচ্ছে।
ভারতীয় হাইকমিশন শুধুমাত্র চিকিৎসা ও জরুরি প্রয়োজনে ভিসা প্রদান করছে। তবে, এই ভিসার সংখ্যাও পূর্বের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৩ সালে যেখানে প্রতিদিন ৫,০০০ থেকে ৭,০০০ মেডিকেল ভিসা ইস্যু করা হতো, বর্তমানে তা ১,০০০-এরও কমে নেমে এসেছে ।
পর্যটন ভিসা: বর্তমানে বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটন ভিসা প্রদান স্থগিত রয়েছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ ভিসা কার্যক্রম চালু করা হবে না।
আরও পড়ুনঃ Indian Medical Visa
কবে চালু হবে ভারতীয় ভিসা (Indian Visa)?
২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসা চালু হয়নি। ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার মনোজ কুমার ৯ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ইন্ডিয়ান ট্যুরিস্ট ভিসা চালু করা হবে। তবে, বর্তমানে শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসা ও তৃতীয় দেশে যাত্রার ক্ষেত্রে ভিসা প্রদান করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে যে, ভারতীয় টুরিস্ট ভিসা আগামী মার্চ মাস থেকে পুনরায় চালু হবে। কিন্তু ভারতীয় দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, এ বিষয়ে কোনো সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হয়নি।
বর্তমানে ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসা চালুর বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। তবে, ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনারের বক্তব্য অনুযায়ী, খুব শীঘ্রই এই ভিসা চালু করা হতে পারে।
কেন বাংলাদেশীদের জন্য ভারতীয় ভিসা বন্ধ করা হয়?
ভারত সরকার বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রদান আংশিকভাবে বন্ধ বা সীমিত করার পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। নিচে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
- ২০২৪ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে যায়, বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর। এই সময় বিরোধী দলগুলোর সহিংস আন্দোলন ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় ভারত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। ভারত মনে করে, এই অস্থিরতা ভিসা প্রক্রিয়াকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
- ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তা নিরাপত্তার অভাব অনুভব করেন। ফলে ভারত সরকার তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয় এবং ভিসা পরিষেবাও সীমিত করে দেয়।
- বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সহিংসতা বেড়ে যাওয়াও একটি কারণ। এই পরিস্থিতিতে ভারত ভিসা নীতিতে কঠোরতা আনে।
- বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে চীন যদি চিকিৎসা ও বাণিজ্যিক খাতে বাংলাদেশে আরও গভীরভাবে ঢুকে পড়ে, তবে ভারত তার প্রভাব হারাতে পারে—এই আশঙ্কা থেকেও ভারতের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারে।
ভারতীয় ভিসা বন্ধ হবার প্রভাবঃ
ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় বাংলাদেশিদের ওপর বহুমাত্রিক প্রভাব পড়েছে, যা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। নিচে এর প্রধান প্রভাবগুলো তুলে ধরা হলো:
- ভারত, বিশেষ করে কলকাতা ও চেন্নাই, বাংলাদেশের রোগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা গন্তব্য। ভিসা বন্ধ থাকায় অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে পারছেন না, ফলে তাদের চিকিৎসা ব্যয় ও ঝুঁকি বেড়েছে। এই সুযোগে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে চিকিৎসা খাতে সম্পর্ক জোরদার করছে, যেমন ঢাকায় ‘ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল’ স্থাপনের পরিকল্পনা।
- ভারতীয় ভিসা বন্ধের ফলে বাংলাদেশি পর্যটকদের ভারতে যাতায়াত কমে গেছে। ফলে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে যাত্রী সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা দুই দেশের পর্যটন ও বিমান খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ।
- ভিসা বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা ভারতে যাতায়াত করতে পারছেন না, ফলে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে। এছাড়া, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি পর্যটকদের অভাবে হোটেল, রেস্তোরাঁ ও হাসপাতালগুলোতে ব্যবসা কমে গেছে ।
- ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বা অধ্যয়নের পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ভিসা না পেয়ে সমস্যায় পড়েছেন। অনেকেই বিকল্প গন্তব্য খুঁজছেন, যা তাদের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ হচ্ছে ।
- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতীয় আশ্রয় এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন বেড়েছে। এর ফলে ভারতীয় ভিসা পরিষেবা সীমিত করা হয়েছে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করেছে ।
- ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় বাংলাদেশি পর্যটকরা মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতে ভ্রমণ করছেন। ফলে এসব গন্তব্যে বিমান ভাড়া বেড়েছে এবং নতুন পর্যটন বাজার তৈরি হয়েছে ।
- সারসংক্ষেপে, ভারতীয় ভিসা বন্ধের ফলে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যবসা ও ভ্রমণ খাতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এই পরিস্থিতি দুই দেশের সম্পর্কের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।